Typhoid polysaccharide vaccine_1754968913.jpg

বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন কিভাবে করবেন? ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ গাইড ২০২৫

বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন কিভাবে করবেন? ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ গাইড ২০২৫

বাংলাদেশে ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দেশের প্রথম সরকারি টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম (Typhoid Vaccination Program)। এই উদ্যোগের আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোর বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা (Free Typhoid Vaccine) পাবে। তবে টিকা নেওয়ার জন্য আগেই নিবন্ধন (Registration) করা বাধ্যতামূলক।

এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি অনেকেই জেনে না থাকায় আজকের এই গাইডে আমরা ধাপে ধাপে বিস্তারিত তুলে ধরব কিভাবে আপনি আপনার সন্তান বা নিজের জন্য সহজেই টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন (Typhoid Vaccine Registration) করতে পারবেন।

বাংলাদেশে টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে সরকার যেভাবে বড় উদ্যোগ নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে দেশের প্রথম Typhoid Vaccination in Bangladesh কার্যক্রম ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। এই Free Typhoid Vaccine কর্মসূচির মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোর বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা (Typhoid Vaccine) পাবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি Child Health Program Bangladesh এর অন্যতম সফল অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম এবং এর গুরুত্ব

টাইফয়েড বা Typhoid Fever একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ যা সাধারণত দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু ও কিশোর টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি প্রাণঘাতী হয়। তাই এই রোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার Government Health Initiatives এর আওতায় এই টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে।

টাইফয়েড টিকার নাম ও দাম

বর্তমানে বাংলাদেশে যেই টিকা দেওয়া হবে, তার নাম হলো টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (Typhoid Conjugate Vaccine - TCV)। এটি WHO অনুমোদিত এবং এক ডোজেই দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে। এই টিকা সম্পূর্ণ Free Typhoid Vaccine হিসেবে প্রদান করা হবে, তাই ব্যক্তিগতভাবে কোনো টাইফয়েড টিকার দাম দিতে হবে না।

কারা এই টিকা পাবে?

  • সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিম্নলিখিত বয়সের শিশুরা এই টিকা পাবেন:
  • বয়স ৯ মাস থেকে ১৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন পর্যন্ত
  • প্রথম ধাপে স্কুলে পড়ুয়া শিশু-কিশোররা
  • স্কুলে না পড়া শিশুদের জন্য পরবর্তী ধাপে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকে (Community Clinic) টিকা প্রদান করা হবে

 

টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন কেন জরুরি?

সরকারের স্বাস্থ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী, টিকা কার্যক্রমের জন্য সঠিক তথ্য ও সুবিধাভোগী শিশুদের তালিকা তৈরি করতে নিবন্ধন আবশ্যক। নিবন্ধনের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হবেন শিশুর জন্য সরকারীভাবে টিকা বরাদ্দ হয়েছে এবং নির্ধারিত সময় ও স্থানে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন।

টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ (Birth Registration Certificate)
  • পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • শিশুর নাম, জন্মতারিখ ও ঠিকানা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য

এই তথ্যগুলো ছাড়া অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

ধাপে ধাপে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া

ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

  • নিবন্ধনের জন্য প্রথমে সরকার কর্তৃক চালু করা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে:
    https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv

ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন ফর্ম খুলুন

  • ওয়েবসাইটে গেলে আপনি ‘নতুন নিবন্ধন’ বা ‘New Registration’ অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে শিশুর তথ্য ফরমে প্রবেশ করুন।

ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন

  • শিশুর পূর্ণ নাম লিখুন
  • জন্মতারিখ সঠিকভাবে উল্লেখ করুন
  • পিতামাতার নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিন
  • শিশুর স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করুন

ধাপ ৪: জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য যোগ করুন

  • বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর সঠিকভাবে ফর্মে প্রবেশ করান, কারণ এটি বয়স যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।

ধাপ ৫: যোগাযোগের তথ্য দিন

  • মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা দিন যাতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায় এবং নিবন্ধন নিশ্চিতকরণের তথ্য পাওয়া যায়।

ধাপ ৬: ফরম সাবমিট করুন

  • সব তথ্য পূরণ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। সফলভাবে সাবমিট হলে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা বা নোটিফিকেশন পাবেন।

ধাপ ৭: ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করুন

  • নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। এটি টিকাদানের সময় সঙ্গে রাখতে হবে।

স্কুলভিত্তিক নিবন্ধন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্ব

যদি আপনার সন্তান স্কুলে পড়ে, তাহলে আলাদা নিবন্ধনের প্রয়োজন হয় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুদের তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেবে। এরপর নির্ধারিত সময়ে স্কুলেই টিকা প্রদান করা হবে।

স্কুলে না পড়া শিশুদের জন্য নিবন্ধন করতে হবে নিজ এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা অনলাইনে উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইট থেকে।

HPV ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন (Human Papillomavirus Vaccine Registration)

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এইচ পি ভি ভ্যাকসিন (HPV Vaccine) প্রদানের জন্যও রেজিস্ট্রেশন চলছে। এই টিকা সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্য কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়। HPV ভ্যাকসিনের জন্যও অনলাইন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন।

নিবন্ধন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • নিবন্ধন করা শিশুদেরই টিকা প্রদান করা হবে। তাই সময়মতো নিবন্ধন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
  • নিবন্ধনের সময় তথ্য অবশ্যই সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ হতে হবে। ভুল তথ্য দিলে টিকা নেয়ার সময়ে সমস্যা হতে পারে।
  • নিবন্ধনের শেষ সময়সীমা ও টিকাদানের সময়সূচি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সময়মতো জানানো হবে।

 

 বিস্তারিত পড়ুনঃ
টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম ২০২৫: ৫ কোটি শিশু পাবে বিনামূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন

FAQ — টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১: টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন কবে থেকে শুরু হবে?
উত্তর: ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু হবে।

প্রশ্ন ২: নিবন্ধন করতে কি খরচ দিতে হবে?
উত্তর: না, নিবন্ধন ও টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

প্রশ্ন ৩: নিবন্ধনের জন্য কি কি প্রয়োজন?
উত্তর: শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ ও পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৪: স্কুলপড়ুয়া শিশুদের জন্য কি আলাদা নিবন্ধন লাগবে?
উত্তর: না, স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজ থেকে তালিকা তৈরি করে নিবন্ধন নিশ্চিত করবে।

প্রশ্ন ৫: টিকা কার্ড কি হবে?
উত্তর: নিবন্ধন শেষে ভ্যাকসিন কার্ড ইস্যু করা হয়, যা টিকা নেওয়ার সময় দরকার।

 

বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সঠিক সময়ে নিবন্ধন করলে আপনার শিশুকে সরকারী বিনামূল্যে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV) দেওয়া হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন অভিভাবকরা দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন নিশ্চিত করুন।

স্বাস্থ্যই সর্বোচ্চ সম্পদ, তাই সঠিক নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করে শিশুর সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করুন।