Typhoid vaccine_1754967197.jpg

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম ২০২৫: ৫ কোটি শিশু পাবে বিনামূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন

বাংলাদেশে টাইফয়েড (Typhoid) রোগ প্রতিরোধে এবার বড় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দেশের প্রথম টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম (Typhoid Vaccination Program), যার আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোর বিনামূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Typhoid Vaccine) পাবে। প্রথম ১০ দিন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ স্কুলে এই টিকা নিতে পারবে। এই উদ্যোগ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে টাইফয়েড রোগের বিস্তার কমানোর লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

টাইফয়েড টিকা(Typhoid Vaccination) রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

টাইফয়েড টিকা নিতে হলে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন (Online Registration) বাধ্যতামূলক। নিবন্ধন করার জন্য যেতে হবে https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv এই ওয়েবসাইটে। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর ভ্যাকসিন কার্ড (Vaccine Card) ডাউনলোড করতে হবে। শিশুদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাকসিন কার্ড পাওয়া যাবে, যা পরবর্তী সময়ে টিকাদানের জন্য প্রয়োজনীয়।

স্কুলভিত্তিক টিকাদান (School-Based Vaccination)

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রমের প্রথম ১০ দিন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে স্কুলভিত্তিক টিকাদান (School-Based Immunization) কার্যক্রমের আওতায় টিকা পাবেন। এজন্য বিদ্যালয়ে টিকা নেয়ার আগে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

টাইফয়েড রোগ এবং এর ঝুঁকি (Typhoid Disease & Risks)

টাইফয়েড হলো একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ (Bacterial Infectious Disease), যা সাধারণত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতি বছর বাংলাদেশে হাজার হাজার শিশু ও কিশোর টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানির কারণ হয়। টাইফয়েডের উপসর্গগুলো হলো জ্বর, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া এবং দুর্বলতা। যথাসময়ে চিকিৎসা ও টিকা না নিলে রোগটি মারাত্মক জটিলতা ডেকে আনতে পারে।

টাইফয়েডের প্রধান ঝুঁকি হলো অপরিষ্কার পানি এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ। যেখানে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব, সেখানে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এজন্য টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কে পাবে টাইফয়েড টিকা? (Who Will Receive Typhoid Vaccine?)

  • সরকারি ঘোষণামতে, নিম্নোক্ত বয়সের শিশুরা টাইফয়েড ভ্যাকসিন পাবেন:
  • বয়স ৯ মাস থেকে ১৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন পর্যন্ত
  • প্রথম ধাপে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের জন্য স্কুল ভিত্তিক টিকাদান হবে
  • যারা স্কুলে পড়ে না, তাদের জন্য পরবর্তী ধাপে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিকে (Community Clinic) টিকা প্রদান করা হবে

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম ২০২৫ এর সময়সূচি (Typhoid Vaccination Schedule 2025)

  • শুরুর তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • প্রথম ধাপ: ১–১০ সেপ্টেম্বর (স্কুলভিত্তিক টিকা প্রদান)
  • দ্বিতীয় ধাপ: স্কুলে না পড়া শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা প্রদান
  • খরচ: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে

টাইফয়েড টিকার নাম (Name of the Vaccine)

বাংলাদেশে যে টিকা দেওয়া হবে তা হলো টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (Typhoid Conjugate Vaccine - TCV)। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন, যা এক ডোজেই দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে।

টিকা নিবন্ধন পদ্ধতি (Vaccination Registration Process)

সরকারি সূত্র মতে:

  • স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা নিবন্ধন প্রয়োজন নেই, স্কুল থেকেই তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
  • স্কুলে না পড়া শিশুদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
  • নিবন্ধনের সময় শিশুর বয়স ও ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য জন্ম সনদ বা পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হতে পারে।

টাইফয়েড টিকা নেওয়ার উপকারিতা (Benefits of Typhoid Vaccination)

  • দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা (Long-term Protection): একবারের ডোজেই বছর খানেকের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • জটিলতা প্রতিরোধ (Complication Prevention): টাইফয়েডের ফলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অন্ত্র ফোটা, ডায়রিয়া ইত্যাদি মারাত্মক জটিলতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
  • জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা (Public Health Protection): বড় পরিসরে টিকাদান কার্যক্রম রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনে এবং সমাজকে স্বাস্থ্যবান রাখে।

টাইফয়েড টিকা কার্যক্রমে এইচপিভি টিকার উল্লেখযোগ্য দিক (HPV Vaccination Alongside)

এই কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এইচপিভি টিকা (Human Papillomavirus Vaccine) প্রদানও চলতে পারে, যা সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আরও জোরদার হবে।

সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Precautions & Side Effects)

টাইফয়েড টিকা সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর, ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা বা হাত ফুলে যাওয়া হতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়। গুরুতর প্রতিক্রিয়া খুবই বিরল।

FAQ — টাইফয়েড টিকা সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন (Frequently Asked Questions)

১. টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম কবে শুরু হবে?
উত্তর: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে।

২. এই টিকা নিতে কি কোনো টাকা লাগবে?
উত্তর: না, সরকার এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে।

৩. কারা এই টিকা পাবে?
উত্তর: ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোররা।

৪. টাইফয়েড টিকার নাম কী?
উত্তর: টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (Typhoid Conjugate Vaccine, TCV)।

৫. টিকা নিবন্ধন কিভাবে করবেন?
উত্তর: স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল থেকেই নিবন্ধন হবে, অন্যরা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করবেন।

 

উপসংহার 

টাইফয়েড প্রতিরোধে এই জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয় না, বরং সমগ্র সমাজকে রোগমুক্ত রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। তাই সকল অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সময়মতো নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সরকারের এই উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমে যাবে এবং সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। আপনার ও আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের জন্য সময়মতো টিকা নিন এবং নিরাপদ পানি ও পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করুন।

টাইফয়েড প্রতিরোধে সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।