sulfuric acid invention_1750937206.jpg

সালফিউরিক এসিড কোন মুসলিম বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন

জাবির ইবন হাইয়ান (Jabir Ibn Hayyan), যিনি ইউরোপে Geber নামে পরিচিত, ৮ম শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর-রশীদের আমলে কর্মরত ছিলেন এবং তার জন্মস্থান ছিল খোরাসানে (বর্তমান ইরান)। তাকে "রসায়নের জনক" বলা হয়, কারণ তিনিই আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেন।

 

জাবির ইবন হাইয়ানের জীবনী

জাবির ইবন হাইয়ান, যিনি ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন মহান বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত, তার জন্ম হয় ৭২১ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ইরানের তুস শহরে। তার বাবা ছিলেন একজন ওষুধ প্রস্তুতকারক ও পারস্যের একজন রাজনীতিক, যিনি পরবর্তীতে উমাইয়া শাসকদের বিরোধিতা করায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। বাবার মৃত্যুর পর ছোটবেলা থেকেই জাবির শিক্ষাজীবনে মনোনিবেশ করেন। তিনি কুফায় স্থানান্তরিত হয়ে ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহঃ)-এর ছাত্র হিসেবে ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি চিকিৎসা, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও রসায়ন নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা চালান।

জাবির ইবন হাইয়ান ছিলেন একজন নিরবিচারে গবেষক, যিনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন, ধাতব রূপান্তর এবং ঔষধ প্রস্তুতের ওপর দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। তাকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়, কারণ তিনিই সর্বপ্রথম রাসায়নিক গবেষণাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ডিস্টিলেশন, ক্রিস্টালাইজেশন, ফিল্টারেশন, সাব্লিমেশন ইত্যাদি গবেষণা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড আবিষ্কার করেন, যা আজও শিল্প ও চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

তার রচনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “কিতাব আল-কিমিয়া”, “কিতাব আস-সাবাইন”, ও “বুক অফ মার্সি”। এই সব গ্রন্থগুলো পরবর্তীতে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ হয় এবং ইউরোপে বিজ্ঞান বিপ্লবের মূলে পরিণত হয়। তিনি প্রায় ৩,০০০-এর বেশি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে অনেকগুলো রসায়ন, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও দার্শনিক চিন্তাধারার ওপর লেখা।

জাবির ইবন হাইয়ানের জীবনে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশীলনের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য অনুধাবনের মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব। তার গবেষণাগার ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি, যেখানে তিনি অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন এবং যন্ত্রপাতি নিজে তৈরি করতেন।

জাবির ইবন হাইয়ান ৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন (কিছু সূত্র মতে ৮০৩ খ্রিষ্টাব্দ)। মৃত্যুর পরও তিনি মুসলিম ও অমুসলিম উভয় জগতে অমর হয়ে আছেন। তার অবদান বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা হয়েছে।

 

ইসলামিক পোষ্ট  পড়ুনঃ 
জুমার দিনের আমল ,ফজিলত ও সকল সুন্নাহ সহ বিস্তারিত জানুন

 

🧪 সালফিউরিক অ্যাসিডের আবিষ্কার

জাবির ইবন হাইয়ান সালফিউরিক অ্যাসিডসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী অ্যাসিড প্রথম প্রস্তুত করেন। তখন এগুলোকে বলা হতো:

  • "Oil of Vitriol" (তীব্র তেল)
  • "জাজ আল-জাওহার" (جوهر الزاج)

তিনি লোহার সালফেট বা তামার সালফেট থেকে ডিস্টিলেশন পদ্ধতিতে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করেন। পরবর্তীতে ইউরোপিয়ান রসায়নবিদরা তার এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে শিল্পোন্নত অ্যাসিড উৎপাদন শুরু করেন।

🔬 জাবির ইবন হাইয়ানের বৈজ্ঞানিক অবদান

✅ রসায়নে নতুন নতুন পদার্থ আবিষ্কার
✅ ডিস্টিলেশন, সাব্লিমেশন, ফিল্টারেশন প্রভৃতি আধুনিক পদ্ধতির ভিত্তি
✅ ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন (আলম্বিক/retort)
✅ অ্যালকোহল, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুতি
✅ ধাতব রূপান্তরের তত্ত্ব (alchemy) ও ঔষধ তৈরির প্রক্রিয়া

📚 তার রচিত বিখ্যাত বইসমূহ

  • কিতাব আল-কিমিয়া (Kitab al-Kimya)
  • কিতাব আল-সাবাইন (Kitab al-Sabeen)
  • বুক অফ মার্সি
  • বুক অফ সিক্রেটস

এই বইগুলো পরবর্তীতে ল্যাটিনে অনুবাদ হয়ে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত করে।

🏆 কেন জাবির ইবন হাইয়ানকে রসায়নের জনক বলা হয়?

🔹 তিনিই প্রথম রসায়নকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করান
🔹 প্রাকৃতিক উপাদানের রাসায়নিক পরিবর্তন ও বিশ্লেষণ শুরু করেন
🔹 গবেষণাগার ব্যবস্থার সূচনা করেন
🔹 তার গবেষণায় ধর্ম, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান একত্রিত হয়েছে

 

সংশ্লিষ্ট পোস্টঃ

কোন মুসলিম বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অংকন করেন

মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম ও আবিষ্কার

প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী কে? – জীবনী, ইতিহাস ও অবদান বিস্তারিত

 

🌍 ইসলামী স্বর্ণযুগে বিজ্ঞান

জাবির ইবন হাইয়ান ছিলেন ইসলামী স্বর্ণযুগের অংশ, যখন মুসলিম বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ও রসায়নে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন। সালফিউরিক অ্যাসিডের মতো আবিষ্কার প্রমাণ করে যে মুসলিম সমাজ কেবল ধর্মীয় নয়, বরং বৈজ্ঞানিক চর্চায়ও অগ্রণী ছিল।

✅ উপসংহার

জাবির ইবন হাইয়ান কেবল একজন রসায়নবিদ নন, বরং আধুনিক রসায়নের পথিকৃৎ। সালফিউরিক অ্যাসিড আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, ইসলামিক জ্ঞানচর্চা কেবল ধর্মীয় পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বিজ্ঞানের প্রতিও ছিল অতীব আগ্রহী।

🔖 আপনি যদি বিজ্ঞানপ্রেমী হন, তাহলে জাবির ইবন হাইয়ানের জীবনী ও আবিষ্কারগুলো জানার মধ্য দিয়ে আপনি ইসলামের গৌরবময় জ্ঞান ঐতিহ্যের সাথে আরও গভীরভাবে পরিচিত হতে পারবেন।