
জুমার দিনের আমল ,ফজিলত ও সকল সুন্নাহ সহ বিস্তারিত জানুন
জুমার দিনের গুরুত্ব ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এটি মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদতের শ্রেষ্ঠ দিন। কুরআন ও সহীহ হাদীসে জুমার দিনের অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ।"
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
"এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।"
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে
"কিয়ামত সংঘটিত হবে জুমার দিনেই।"
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
জুমার দিনে দোয়া কবুলের এক বিশেষ সময় রয়েছে
"জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যেখানে বান্দা যা চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন।"
📚 সহীহ বুখারি: ৯৩৫
গুনাহ মাফের সুযোগ
"যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়... তারপর নামাজ পড়ে ও ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনে, তার পূর্ববর্তী জুমা পর্যন্ত সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।"
📚 সহীহ বুখারি: ৮৮৩
জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
"সূর্য ওঠে এমন দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম।"
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
এই দিনটি শুধু ঈদের মতো আনন্দ নয়, বরং এটি দোয়া কবুলের দিন, গুনাহ মাফের সুযোগ এবং জান্নাতের পথ প্রশস্ত করার সোনালী সুযোগ।
জুমার দিনের বিশেষ ফজিলতসমূহ
✅ ফজিলত | 📖 দলিল |
---|---|
🔹 সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন | সহীহ মুসলিম: ৮৫৪ |
🔹 আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল | সহীহ মুসলিম: ৮৫৪ |
🔹 এই দিনে মৃত্যু বরণ করলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি | মুসনাদ আহমদ: ৭০৫৩ |
🔹 এই দিনে এক বিশেষ সময় রয়েছে, যেখানে দোয়া কবুল হয় | সহীহ বুখারি: ৯৩৫ |
🔹 জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠে দুই জুমার মাঝে নূর | মুসতাদরাক হাকিম: ৩৩৯২ |
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময় সম্পর্কে বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে যে, এই দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যেখানে বান্দা যদি আল্লাহর কাছে কিছু চায়—আর তা হারাম না হয়—তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করেন।
🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"জুমার দিনে একটি মুহূর্ত আছে, যদি কোনো মুসলিম বান্দা সে সময়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ তা তাকে অবশ্যই দেন।"
📚 সহীহ বুখারি: ৯৩৫, সহীহ মুসলিম: ৮৫২
আরো জানুনঃ
জুমার নামাজের নিয়ত, রাকাত সংখ্যা ও ফজিলত - Sothikpath.com
তাহলে সেই সময়টা ঠিক কখন?
উলামা ও মুফাসসিরদের মধ্যে দুটি মত প্রসিদ্ধ:
১. ইমাম বসা থেকে খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত
এই মতের দলিল:
রাসূল ﷺ বলেন,
“ইমাম যখন মিম্বরে বসেন, তখন থেকে জুমার সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টি দোয়া কবুলের সময়।”
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৩
২. আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত
সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত ও অধিকাংশ উলামার মতে এই সময়টি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন:
“জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় হলো আসরের পর শেষ ঘণ্টা।”
📚 জাদুল মা’আদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৩
জুমার দিনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও সুন্নাহ
🔢 | আমল/সুন্নাহ | ব্যাখ্যা ও হাদিস |
---|---|---|
1️⃣ | গোসল করা | “যে জুমার দিন গোসল করে, তা পবিত্রতার পূর্ণতা।” (বুখারি ৮৮৩) |
2️⃣ | পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা ও আতর ব্যবহার | রাসূল ﷺ জুমায় উত্তম জামা পরিধান করতেন। (ইবনে মাজাহ: ১০৯৮) |
3️⃣ | মিসওয়াক করা | দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত |
4️⃣ | সূরা কাহফ তিলাওয়াত | “এই সূরা পাঠ করলে দুই জুমার মাঝে নূর থাকবে।” (হাকিম: ৩৩৯২) |
5️⃣ | জুমার আগেই মসজিদে যাওয়া | যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব। (মুসলিম: ৮৫০) |
6️⃣ | নফল নামাজ পড়া (৪ রাকাত জুমার আগে) | ইবনে মাসউদ (রা.) এর আমল। (আবদুর রাজ্জাক: ৫৫৭৪) |
7️⃣ | খুতবার সময় একদম চুপ থাকা | “যে খুতবার সময় কথা বলল, তার জুমা শূন্য।” (বুখারি: ৯৩৩) |
8️⃣ | ইমামের কাছাকাছি বসা | সওয়াবের পরিমাণ বাড়ে (তিরমিজি: ৫০৯) |
9️⃣ | দু’আ করা (মাগরিবের আগে বিশেষ সময়) | “জুমায় এক সময় আছে, তখন যা চাওয়া হয়, তা কবুল হয়।” (মুসলিম: ৮৫২) |
🔟 | জুমার পর ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ | “জুমার পর ৪ রাকাত পড়ো।” (মুসলিম: ৮৮১) |
জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা ও ধরন
নামাজ | রাকাত | ধরন |
---|---|---|
জুমার আগে সুন্নাত | ৪ রাকাত | মু’আক্কাদাহ |
জুমার ফরজ | ২ রাকাত | ইমামের পেছনে জামাআত |
জুমার পরের সুন্নাত | ৪ রাকাত (২+২) | মু’আক্কাদাহ |
অতিরিক্ত নফল | ২ রাকাত | ইচ্ছাধীন (সাওয়াবের কাজ) |
📌 মোট: ১০ রাকাত পড়া উত্তম। |
জুমার নামাজের নিয়ত (মুকতাদির জন্য)
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ الْجُمُعَةِ مَأْمُومًا، أَدَاءً، لِلَّهِ تَعَالَى
🔹 বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিল জুমুআতি মা'মূমান, আদায়ান লিল্লাহি তা'আলা।
🔸 বাংলা অর্থ:
আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দু’ রাকাত জুমার নামাজ ইমামের অনুসরণে আদায় করার নিয়ত করলাম।
📌 এটি হাদিসের নয়, বরং ফিকহে বর্ণিত একটি নিয়তের ধরন। মনে মনে নিয়তই যথেষ্ট।
উপসংহার
জুমার দিন শুধুমাত্র সাপ্তাহিক একটি নামাজের দিন নয়, এটি গুনাহ মোচনের, দোয়া কবুলের এবং আত্মশুদ্ধির একটি সোনালী সুযোগ।
আসুন, আমরা জুমার ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।
এই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তথ্যটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। হোক সকলের জন্য হিদায়াত ও নাজাতের পথ।
🤲 “হয়তো আপনার একটি শেয়ার কারো নামাজ ও আমলকে কবুল হওয়ার পথে পৌঁছে দিতে পারে!”
People Also Ask: জুমার দিন সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্ন
১. জুমার দিন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর:
জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন, জান্নাতে প্রবেশ করেন, আবার বেরও করা হয়। এই দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত থাকে, যেখানে বান্দার দোয়া কবুল হয়। এছাড়াও এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫৪
২. জুমার দিনে কী কী আমল করা সুন্নাত?
উত্তর:
জুমার দিনে গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, আতর ব্যবহার করা, মিসওয়াক করা, সূরা কাহফ তিলাওয়াত, আগেভাগে মসজিদে যাওয়া, নফল নামাজ পড়া, এবং খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা — এগুলো সব সুন্নাত।
৩. জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময় কখন?
উত্তর:
সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হলো আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। তবে ইমামের খুতবার সময়ও একটি সম্ভাব্য সময় হিসেবে হাদিসে উল্লেখ আছে।
📚 সহীহ মুসলিম: ৮৫২
৪. জুমার নামাজের রাকাত কয়টি?
উত্তর:
সাধারণত ১০ রাকাত:
৪ রাকাত জুমার আগে সুন্নাত
২ রাকাত ফরজ (ইমামের পেছনে)
৪ রাকাত পরে সুন্নাত (২+২)
অতিরিক্ত ২ রাকাত নফল পড়া যায় ইচ্ছাধীনভাবে।
৫. মহিলাদের জন্য কি জুমার নামাজ ফরজ?
উত্তর:
না, নারীদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ নয়। তবে তারা ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। চাইলে জুমার ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো পালন করতে পারেন।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.