
নামাজের নিয়ত কোন দোয়া পড়তে হয় - হাদীসের আলোকে সঠিক জানুন। না জানার কারণে আমল বরবাদ হচ্ছে না তো?
প্রশ্ন:
নামাজের নিয়ত করার সময় কোনো দোয়া বা আরবি বাক্য পড়তে হয় কি?
নামাজের নিয়ত কোন দোয়া পড়তে হয় - হাদীসের আলোকে সঠিক জানুন:
না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো “নিয়ত” এর জন্য মুখে কোনো দোয়া বা বাক্য পড়েননি। নিয়ত হলো হৃদয়ের ইচ্ছা বা সংকল্প, যা মনে মনে ঠিক করতে হয় — মুখে বলা জরুরি বা সুন্নত নয়।
হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ:
১. রাসূল (ﷺ)-এর নামাজের পদ্ধতি:
▶️ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমরা এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেমন আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখো।”
📚 (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬৩১)
🔸 রাসূল ﷺ কখনো মুখে “নিয়ত করিলাম দুই রাকাত ফরজ...” ইত্যাদি কিছু বলেননি।
২. নিয়ত কী?
نِيَّة অর্থ: ইচ্ছা, উদ্দেশ্য, মনোভাব।
→ এটি হৃদয়ের কাজ — মনে মনে ঠিক করলেই নিয়ত হয়ে যায়।
🎯 উদাহরণ:
আপনি যদি মনে মনে ঠিক করেন “আমি এখন ফজরের ২ রাকাত নামাজ পড়ব” — এটাই নিয়ত। আলাদা করে মুখে বলার প্রয়োজন নেই।
আরো পড়ুন
নফল রোজার নিয়ত ও ফজিলত
❌ ভুল প্রচলিত বাক্য (যা কুরআন-হাদীসে নেই):
🔻 “নিয়ত করিলাম আমি দুই রাকাত নামাজ আদায় করিব... কেবলামুখী হয়ে...”
🔻 “উছাল্লি ফরদাল ফজরি...”
➡️ এসব মুখে বলার কোনো দলীল সহীহ হাদীসে নেই।
➡️ বরং এগুলো অনর্থক কথা বলে নামাজ শুরু করা হয়ে যায়, যা বিদআতের শামিল হতে পারে।
✅ মূল নীতিঃ “নিয়ত অন্তরের কাজ” – হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
হাদীস ১:
"إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى"
“সব কাজের সঠিকতা নিয়তের উপর নির্ভর করে, এবং প্রত্যেকের জন্য রয়েছে সে যা নিয়ত করেছে।”
📚 (সহীহ বুখারী: ১, সহীহ মুসলিম: ১৯০৭)
🔹 এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“নিয়ত হলো অন্তরের ইচ্ছা — মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।”
📚 (শরহ নববী ‘আলা মুসলিম)
হাদীস ২: রাসূল ﷺ নামাজ শুরুর আগে কী করতেন?
🔹 হাদীসে এসেছে:
كان رسولُ اللهِ ﷺ إذا قام إلى الصلاةِ كبَّر
“রাসূল ﷺ যখন নামাজে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর (আল্লাহু আকবার) দিয়ে শুরু করতেন।”
📚 (সহীহ বুখারী: ৭৪৪)
🔸 কোথাও পাওয়া যায় না যে তিনি নামাজ শুরুর আগে মুখে “নিয়ত করিলাম…” ইত্যাদি বলতেন।
❌ মুখে নিয়ত বলার দলীল নেই:
🔸 ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ — কারোরই মাযহাবে মুখে নিয়ত বলাকে আবশ্যক করা হয়নি।
ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:
“নিয়তের স্থান অন্তর। এটি মুখের বিষয় নয়।”
📚 (আল-মুগনি, খণ্ড ১)
⚠️ মুখে বললে বিদআত হয় কেন?
📌 “বিদআত” মানে ইসলামি শরিয়তের নামে এমন কিছু করা যা রাসূল ﷺ, সাহাবা, বা প্রথম যুগের সালাফদের মধ্যে ছিল না।
"من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو ردٌّ"
“যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করলো, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় — তা বাতিল।”
📚 (সহীহ বুখারী: ২৬৯৭, মুসলিম: ১৭১৮)
🔹 তাই, যখন কেউ মনে না রেখে শুধু মুখে "নিয়ত করিলাম" বলে, সেটা বিদআতের পর্যায়ে পড়ে — কারণ এটি রাসূল ﷺ এর সুন্নাতের বাইরে।
তাহলে ঠিকভাবে নিয়ত কীভাবে করবেন?
বিষয় | করণীয় |
---|---|
🧠 মনে ঠিক করুন | এখন আমি কোন নামাজ পড়ছি? (যেমন: যোহরের ৪ রাকাত ফরজ) |
🧭 কিবলামুখী হন | এবং দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা বলুন |
🗣️ মুখে কিছু না বললেও | নিয়ত হয়ে গেছে — কারণ আপনি জানেন আপনি কী পড়ছেন |
নিয়তের কিছু সুন্নত উদাহরণ (মনোভাবে):
“আমি আল্লাহর জন্য ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করবো।”
“আমি যোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ জামাতে পড়ছি।”
“আমি আসরের সুন্নত নামাজ পড়বো।”
🔸 এসব কিছু মনেই ভাববেন, মুখে নয়।
❗ নামাজ বরবাদ হচ্ছে কি?
→ যদি কেউ শুধু মুখে নিয়তের বাক্য বলে, কিন্তু মনে করে না — তাহলে নিয়ত হয় না।
→ কিন্তু কেউ যদি মনে ঠিক করে নেয় এবং মুখে না বলে — তাহলে নামাজ সহীহ ইন শা আল্লাহ।
→ মুখে বলাটা না জায়েজ না হারাম, কিন্তু বিদআত ও অপ্রয়োজনীয়।
উপসংহার:
নিয়ত হলো হৃদয়ের কাজ।
মুখে কিছু না বললেও, আপনি যদি জানেন যে কোন নামাজ পড়ছেন — তাহলে আপনার নিয়ত সম্পূর্ণ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত হচ্ছে, নিয়ত মনে করা — মুখে উচ্চারণ নয়।
সংক্ষেপে বললে:
প্রচলিত ধারণা | কুরআন-হাদীস ভিত্তিক সত্য |
---|---|
নিয়তের জন্য মুখে আরবি দোয়া পড়া লাগে | ❌ লাগে না |
“নিয়ত করিলাম আমি...” বলা সুন্নত | ❌ সুন্নত নয় |
নিয়ত না হলে নামাজ সহীহ নয় | ✅ সত্য (কিন্তু নিয়ত মানে মুখে বলা নয়) |
নিয়ত মনে করাই যথেষ্ট | ✅ হ্যাঁ, এটিই সুন্নত |
❓ ১. মুখে নিয়ত বলা কি সুন্নত?
উত্তর:
না, মুখে নিয়ত বলা সুন্নত নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবারা নামাজ শুরুর আগে মুখে কোনো নির্দিষ্ট নিয়তের বাক্য বলেননি। নিয়ত কেবল অন্তরের ইচ্ছা বা সংকল্প।
📚 হাদীস: “নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ বুখারী ১)
❓ ২. নিয়তের জন্য কোনো দোয়া কি আছে?
উত্তর:
না, কুরআন বা সহীহ হাদীসে “নিয়তের দোয়া” নামে কোনো নির্দিষ্ট বাক্য নেই। এটি পরবর্তীতে সংযোজিত। নিয়ত মানে — অন্তরে ঠিক করা আমি কোন নামাজ পড়ছি।
❓ ৩. ভুল নিয়তে নামাজ সহীহ হবে?
উত্তর:
যদি কেউ ভুল করে মুখে কিছু বলে ফেলে, তবে ক্ষতি নেই — যদি তার অন্তরে সঠিক ইচ্ছা বা সংকল্প থাকে। নিয়ত মূলত অন্তরের কাজ — মুখের নয়।
❓ ৪. নিয়ত না করলে কি নামাজ বাতিল?
উত্তর:
হ্যাঁ। নিয়ত ছাড়া নামাজ সহীহ হয় না। নিয়ত নামাজের শর্ত। কিন্তু মুখে না বললে সমস্যা নেই — মনে মনে সংকল্প করলেই যথেষ্ট।
❓ ৫. নিয়তের মুখের বাক্যগুলো বিদআত?
উত্তর:
এসব মুখে উচ্চারণকৃত “নিয়ত করিলাম দুই রাকাত ফরজ…” ইত্যাদি হাদীস বা সাহাবাদের আমলে নেই। তাই এগুলো বিদআতের আওতাভুক্ত — সাবধান হওয়া উত্তম।
📢 এই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তথ্যটি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনার বন্ধু-পরিজনদের সাথেও শেয়ার করুন, যেন তারাও সঠিক নিয়তের মাধ্যমে ইবাদত করে।
হোক এটি সকলের হিদায়াত ও নাজাতের সোপান।
🤲 “হয়তো আপনার একটি শেয়ার কারো নামাজ ও আমলকে কবুল হওয়ার পথে পৌঁছে দিতে পারে!”
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.