
ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠার বিস্তারিত বিবরণ
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
ভারতের ইতিহাসে মুসলিম শাসনের সূচনা ঘটে সিন্ধু সভ্যতার বহু পরবর্তী সময়ে, তবে প্রেক্ষাপট শুরু হয় সিন্ধু নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা সভ্যতা থেকে। এই অঞ্চলের মানুষদের ‘সিন্ধী’ বলা হতো, এবং পরবর্তীতে আরব বণিক ও পর্যটকদের ভাষায় শব্দটি ‘হিন্দ’ রূপ নেয়। এখান থেকেই 'হিন্দু' শব্দের উৎপত্তি, যদিও মূলত এটি কোনো ধর্ম নয়; বরং ভারতবাসীদের ভৌগোলিক পরিচয়। তাদের ধর্মের নাম ছিল সনাতন ধর্ম। ভারতের ভৌগোলিক কাঠামো বহু ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল, যেমন দিল্লি, আজমীর, কাশ্মীর, মালব, কনৌজ, বাংলা, আসাম প্রভৃতি। তখনকার ভারতে কোনো কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না।
৭১২ খ্রিষ্টাব্দে আরবের তরুণ সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম সিন্ধু দখল করেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত। তবে এটি সীমিত আকারে ছিল এবং কেন্দ্রীয় শাসন কায়েম হয়নি। এরপর দীর্ঘ ২৫০ বছর পরে তুর্কি মুসলিম শাসকগণ ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে গজনি বংশের আলপ্তগীন, সাবুক্তগীন এবং সুলতান মাহমূদ গজনভি উল্লেখযোগ্য। গজনি বংশ প্রায় ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল আক্রমণ করে। এই বংশের সর্বশেষ শাসক মালিক খসরু ১১৮৬ সালে মুহাম্মাদ ঘুরীর কাছে পরাজিত হন। এরপর গজনী অঞ্চলে ঘোরি বংশের শাসন শুরু হয়, এবং মুঈজ উদ্দীন মুহাম্মাদ ঘুরি ভারতে মুসলিম শাসনের স্থায়ী ভিত্তি রচনা করেন। ১১৯২ সালের তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তিনি রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন, যা ভারতের কেন্দ্রীয় মুসলিম শাসনের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ ঘুরীর মৃত্যুর পর তার দাস কুতুব উদ্দীন আইবেক দিল্লিতে ‘দাস বংশ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশ ৮৪ বছর রাজত্ব করে এবং তাদের পর আসে খিলজী, তুঘলক, সৈয়দ ও লোদি বংশ। এই সবগুলো মিলিয়ে দিল্লি সালতানাত প্রায় ৩২০ বছর স্থায়ী হয়। এরপর ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে মুঘল শাসনের সূচনা করেন। মুঘল আমলে ভারতের প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, স্থাপত্য ও সংস্কৃতিতে বড় রকমের পরিবর্তন আসে। বাবরের পর হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের মতো শক্তিশালী শাসকগণ মুঘল সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর তা কেবল নামমাত্র রয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর মুঘল শাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটে। সর্বশেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর ব্রিটিশদের দ্বারা বন্দী হন এবং নির্বাসনে পাঠানো হয় মিয়ানমারের রেঙ্গুনে, যেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই সমাহিত হন। প্রায় ৬৫০ বছরের মুসলিম শাসনের এই দীর্ঘ ইতিহাসে মুসলিম শাসকগণ ভারতে প্রথমবারের মতো একটি কেন্দ্রীকৃত প্রশাসন গড়ে তোলেন, এবং এদেশের স্থাপত্য, আইন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তোলেন।
ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা হয় ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধু অঞ্চলে মুহাম্মদ বিন কাসিমের আগমনের মাধ্যমে। তবে পুরো ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্রে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরি কর্তৃক রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করার মাধ্যমে।
দিল্লি সম্ম্রাটের কেন্দ্রীয় শাসনের পাশে একই সাথে ভারতের – বিভিন্ন রাজ্যে স্বাধীন সুলতান , নিজাম , নবাবদের , ইতিহাসও গুরুত্ব পূর্ন। ইতিহাসের এ অংশ টুকুও একই ভাবে আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর। ইতিহাসের পূর্ব পর যোগ সূত্র খুঁজে নিতে এবং মুসলিম শাসনের সার্বিক গুরুত্ব অনুধাবনে এটি একটি প্রয়োজনীয় পাঠ্ । ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয় থেকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ -উদ -দৌল্লাহ পর্যন্ত । ( ভারতে রাজ্য ও বিভিন্ন অঞ্চল কেন্দ্রিক শাসনামলের মাঝ থেকে এই আলোচনায় শুধু মাত্র বাংলার শাসন আমলকেই দেখান হয়েছে।)
১০৭০ সনে হেমন্ত সেন, বৌদ্ধ পাল রাজত্বের পর বাংলায় সেন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। সেনরা ছিলেন কর্ণাটকের হিন্দু ব্রাম্মন। তারা দক্ষিণ ভারত থেকে বাংলায় আসেন। রাজ্ ভাষা হিসাবে সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেন। বাংলায় পৌত্তলিক,- হিন্দু , বৌদ্ধ পাল এবং পালের পর হিন্দু সেন আমল -শেষে মুসলিম আমল শুরু হয়। ইতিহাস থেকে দেখা যায়যে যুদ্ধ জয়ের মাঝেই মূলত রাজ্য জয় হয়েছে। আর যুদ্ধে হত্যা ও ধ্বংস প্রায় সব ক্ষেত্রেই কম বেশি ঘটেছে। ইতিহাসের পথ ধরেই – ইখতার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি -১২০৪ সনে ১৭ জন অশ্বারোহী ( ঘোড় সৌনিক) নিয়ে – বাংলার রাজা লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়া বিজয় করেন। যুদ্ধের আভাস পেয়ে রাজা লক্ষণ সেন নদীয়া থেকে নৌকা যোগে পূর্ব বাংলায় চলে যান ফলে বখতিয়ার খিলজি বিনা যুদ্ধেই নদীয়া জয় করেছিলেন । বখতিয়ার খলজিকে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এর জন্য দায়ী করেন ,বখতিয়ার খিলজি বঙ্গের নদিয়া দখল করেছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের সীমানায় তিনি পা রাখেন নি- তাহলে কুমিল্লার ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার কিভাবে কে বা কারা ধ্বংস করল? এটিও ইতিহাসেরই একটি প্রশ্ন ? বৌদ্ধ পাল সম্রাজ্যের পতন হয় সেন রাজ বংশের হাত দিয়ে। সেন রাজ্ আমলে বাঙালি বৌদ্ধ এবং নিম্ন বর্ণ শ্রেণীর স্থানীয় হিন্দুরাও এক নির্যাতিত জনগোষ্ঠী ছিল, সেন বংশীয় হিন্দু রাজাদের অত্যাচারে কিছু বাঙালি বৌদ্ধ নেপাল,তিব্বত , মিয়ানমার, শ্রীলংকার দিকে পালিয়ে যান। ওই সময় তাদের হাত দিয়েই বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ নেপাল ভুটান , তিব্বত , সিকিমের দিকে ছড়িয়ে যায় । বৌদ্ধদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং তারা সময়ের সাথে – কালে কালে বাঙালি মুসলিমে পরিণত হন। সময়ের ব্যবধানে বৌদ্ধ মেজরিটি বাংলা, মুসলিম মেজরিটি বাংলায় পরিণত হয়। পরিবর্তনের এই হাওয়া অনেকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেননি। কিছু বৌদ্ধ বুদ্ধের অহিংস বাণীর বিপরীতে মুসলমানদের প্রতি বিরূপ হন। প্রকৃত পক্ষে ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি বৌদ্ধদের সাথে বাঙালি মুসলিমদের কোন বিরোধ না থাকলেও মগদের সাথে / বার্মিজ বৌদ্ধদের সাথে বঙ্গের লোকদের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, মগরা পর্তুগিজদের মত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এসে লুন্ঠন করতো, মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাস হিসাবে বিক্রি করে দিতো। বাংলায় বার্মিজ বৌদ্ধ মগ , খ্রিস্টান পূর্তগীজ জল দস্যু , মারাঠি বর্গী দের – আক্রমণ , হত্যা , লুন্ঠন, অত্যাচার , নির্যাতনের বিরুদ্ধে – সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে মুসলিম শাসক নবাবেরা সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। এখানে বাংলায় মুসলিম শাসনের - ক্রমোনলজি ইতিহাসের ধারা বর্ণনা তুলে ধরা হল।
মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি ডাইনেস্টি – থেকে -নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ – ১২০৪ থেকে ১৭৫৭ সন পর্যন্ত ।)
বাংলায় রাজ্য কেন্দ্রিক শাসন :
মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি ডাইনেস্টি। ১২০৪ -১২২৭
মামলুক সুলতানদের শাসন আমল। ডাইনেস্টি। ১২২৭ – ১২৮১
বলবান শাসন আমল। ডাইনেস্টি। ১২৮১ -১৩২৪
( তুগলগ আমলে -তুগলগ দের নিয়োগ প্রাপ্ত বাংলার শাসন কর্তা ১৩২৪ – ১৩৩৯ * পর্যন্ত।
Governors of Bengal under Tughlaq’ s.– 1338 to 1339.
ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ ডাইনেস্টি। ( বাংলার স্বাধীন শাসক ) ১৩৩৯ – ১৩৫২
ইলিয়াস শাহ ডাইনেস্টি। ১৩৫২ – ১৪১৪
সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ। ১৩৫২ – ১৩৫৮
সিকান্দার শাহ। ১৩৫৮ – ১৩৯০
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ। ১৩৯০ – ১৪১১
সাইফুদ্দিন হামজা শাহ। ১৪১১ – ১৪১২
শাহাবুদ্দিন বাইজিদ শাহ। ১৪১২ – ১৪১৪
জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ। ১৪১৫ – ১৪৩৩ .
( রাজা গণেশের পুত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে -
( জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ নাম গ্রহণ করেন )
শামসুদ্দিন আহমদ শাহ। ১৪৩৩ – ১৪৩৫
নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ – ১৪৩৫ – ১৪৫৯
রুকুনুদ্দীন বারবাক শাহ -১৪৩৫ – ১৪৭৪।
শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ – ১৪৭৪ – ১৪৮১
জালালুদ্দিন ফাতে শাহ – ১৪৮১ – ১৪৮৭
—————————————————
ইলিয়াস শাহ বংশের পালক পুত্র
হাবশী আফ্রিকান দের আমলকে দাস বা
( হাবশী শাসন আমল হিসাবে ইতিহাসে
উল্লেখ হয়।
হাবশী শাসন আমল ১৪৮৭ থেকে ১৪৯৪ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বাংলার স্বাধীন নবাব।
নবাব মুর্শিদ কুলি খান বাংলা , বিহার , উড়িষ্যায় ১৭১৭ সালে স্বাধীন নবাবী আমল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৭০০ সালে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে বাংলায় দেওয়ান / ট্রেজারার হিসাবে নিয়োগ দেন। যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে অল্প সময়েই তিনি নিজাম / সুবেদার / গভর্নর হিসাবে প্রমোশন পান। তার এই প্রোমোশনে অনেকে জেলাস হন তারা কৌশলে সম্রাটের নাতি আজিম উস শান কে তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেন। কুলি খানের জীবন সংকট পূর্ন হয়ে পড়ে ।
সম্রাট আওরঙ্গজেব বিষয়টি অনুধাবন করে নাতি আজিম- উস- শান কে পাটনায় বদলি করেন এবং নাতির নামে পাটনার নাম আজিমাবাদ নাম করণ করেন। এবং মুর্শিদ কুলি খান কে ঢাকা থেকে বদলিকরে মুকসুবাদ পাঠান। পরে এই শহরকেই নবাব মুর্শিদ কুলি খান – মুর্শিদাবাদ নাম করণ , করেন এবং বাংলা বিহার উড়িষ্যার ( রাজধানী করে ) নবাবী আমল শুরু করেন। নুতন এই রাজধানী বাংলার পুরান রাজধানী নদীয়া থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
সিরাজ উদ দৌল্লাহর নানা নবাব আলী বর্দি খান এর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় নাতি সিরাজ উদ দৌল্লাহ কে ১৭৫২ সনের মে মাসে পরবর্তী নবাব হিসাবে ঘোষণা দেন ।
নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ নানা – নবাব আলী বর্দি খানের মতোই এক জন দেশ প্রেমিক প্রজা হিতৌষী জন দরদী সাহসী নবাব ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পরই তিনি বুঝতে পারেন চারি দিকে তিনি শত্রু পরিবেষ্টিত। প্রাসাদে খালা ঘসেটি বেগম , মীর জাফর আলী খান , বাইরে -জগৎ শেঠ , উমি চাদ , রায় দুর্লভ। কলকাতায় ইংরেজ , পশ্চিমে মারাঠা । এই কঠিন সময়ে মা আমেনা বেগম , স্ত্রী লুৎফুন নেছা, ডান হাত মীর মার্দান , ইতিহাসে মীর মদন বলে পরিচিত আর বন্ধু মোহন লাল। যারা তাদের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তরুণ এই নবাবের প্রতি আস্থা রেখেছেন।
পলাশীর চক্রান্ত ও বিশ্বাস ঘাতকতার যুদ্ধ শেষে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। এই পরাজয় এর সাথেই প্রকৃত পক্ষে -ভারতের পরাধীনতা ও মুসলিম শাসনের অবসানের সূত্রপাত।
( পলাশীর যুদ্ধের পরই শুরু হল ব্রিটিশ রাজ আর পরাধীন ভারতের ইতিহাস ।১৭৫৭ র লর্ড ক্লাইভ থেকে ১৮৫৮ র লর্ড ক্যানিং এবং ১৯৪৭ এর লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর )
ভারতে মুসলমানদের হাত থেকে চক্রান্ত করে শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার কথা ইংরাজ সব সময়ই মনে রেখেছে। মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ , বিদ্বেষ , অবিশ্বাসের কমপ্লেক্স তাদের মনে থেকেই গেছে। মুসলমানকে দাবিয়ে রাখবার সব প্রচেষ্টাই তারা করেছে। তার পর ও ভারত থেকে মুসলিম মুছে যায়নি আজও ভারতের জন সংখ্যার ১৪.২৩ % মুসলমান। পস্চিমে ৯৫ % মুসলিম জন সংখ্যার পাকিস্তান। পূর্বে ৯০ % মুসলিম জন সংখ্যার বাংলাদেশ । অবশ্যই ভারতে মুসলিম অবদান শুধুমাত্র শুধু মাত্র সংখ্যার মাপে নয়। অনেক অবদানের সাথে ব্রাহ্মণ , ক্ষয়ত্রীও , শুদ্র, বৈষব ,- দলিত সবাইকে এক হিন্দু নাম ধরে ডেকে একটি সর্ব ভারতীয় হিন্দু পরিচয় আইডি প্রদান করে হিন্দু জাতীয়তাবোধের নুতন পথ করে দিয়েছে। একই ভাবে রাজা ভরতের নামে ডাকা ভারত নামকে হিন্দুস্তান বলে প্রথম ডেকেছে।
ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা: দুটি ধাপ
🅰️ ১ম ধাপ: সিন্ধু বিজয় (৭১২ খ্রিষ্টাব্দ)
📍 অঞ্চল: সিন্ধু (বর্তমানে পাকিস্তান)
👑 বিজেতা: মুহাম্মদ বিন কাসিম (উমাইয়া সাম্রাজ্যের সেনাপতি)
🎯 উদ্দেশ্য: আরব বণিকদের নিরাপত্তা ও ইসলাম প্রচার
🛡️ প্রতিকার: রাজা দাহির পরাজিত হন
📌 এটিকে ভারতের উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের প্রথম পদচারণা বলা যায়, তবে এটি ছিল আঞ্চলিক এবং সীমাবদ্ধ।
🅱️ ২য় ধাপ: দিল্লি দখল ও সালতানাত প্রতিষ্ঠা (১১৯২–১২০৬)
📍 মূল ঘটনা: তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ (১১৯২)
⚔️ বিজেতা: মুহাম্মদ ঘোরি
👑 পরাজিত: পৃথ্বীরাজ চৌহান (চৌহান রাজবংশ)
🔁 ফল: দিল্লি দখল, উত্তর ভারতের মুসলিম শাসনের ভিত্তি
🔑 পরে তার গোলাম কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন (১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে), যা ভারতীয় মুসলিম শাসনের প্রথম স্থায়ী শাসনব্যবস্থা।
দিল্লি সালতানাতের সূচনা (১২০৬–১৫২৬)
শাসক বংশ | সময়কাল | প্রতিষ্ঠাতা |
---|---|---|
মামলুক বংশ | ১২০৬–১২৯০ | কুতুবউদ্দিন আইবক |
খিলজি বংশ | ১২৯০–১৩২০ | জালালউদ্দিন খিলজি |
তুঘলক বংশ | ১৩২০–১৪১৪ | গিয়াসউদ্দিন তুঘলক |
সৈয়দ বংশ | ১৪১৪–১৪৫১ | খিজর খান |
লোদি বংশ | ১৪৫১–১৫২৬ | বাহলুল লোদি |
ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস শুধুই জয়ের ইতিহাস নয়, বরং এটি একটি কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, ন্যায়বিচার, স্থাপত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল অধ্যায়। চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লংয়ের বংশধরদের শাসন কেবল ভারত নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও স্মরণীয়।
ফিলিস্তিনের ইতিহাস বিস্তারিত পড়ুনঃ
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের মূল কারণগুলো কী? ইতিহাস, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ
🏛️ মুঘল শাসনের সূচনা (১৫২৬)
- 👑 প্রতিষ্ঠাতা: জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর
- ⚔️ যুদ্ধ: পানিপথের প্রথম যুদ্ধ (১৫২৬)
- 📌 প্রতিপক্ষ: ইব্রাহিম লোদি
- 📍 ফল: দিল্লির লোদি বংশের পতন, মুঘল শাসনের সূচনা

🕌 মুসলিম শাসনের প্রভাব
- 🏗️ স্থাপত্য: কুতুব মিনার, তাজমহল, লাল কেল্লা
- 📚 শিক্ষা: মাদ্রাসা, দারুল উলুম, সাহিত্য
- ⚖️ প্রশাসন: আইনে শরিয়াহ, ভূমি রাজস্বনীতি
- 🌐 ধর্ম: সুফিবাদ, ধর্মীয় সহনশীলতা
উপসংহার:
ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস দীর্ঘ, গৌরবময় ও বহুমাত্রিক। এটি কেবল যুদ্ধ বা জয় নয়, বরং শিক্ষা, সংস্কৃতি, ন্যায়বিচার ও প্রশাসনের এক পরিপূর্ণ ধারা। মুহাম্মদ বিন কাসিমের প্রাথমিক আগমন থেকে শুরু করে বাবরের মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা — সবই ইতিহাসে স্মরণীয় অধ্যায়।
FAQs: ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস
❓ মুসলিমরা ভারতে কবে প্রথম আসে?
✅ উত্তর: মুসলিমরা প্রথম আসে ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে, যখন আরব সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম সিন্ধু অঞ্চল জয় করেন।
❓ ভারতে প্রথম মুসলিম শাসক কে ছিলেন?
✅ উত্তর: আরবের মুহাম্মাদ বিন কাসিমকে ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে ধরা হয়। তবে স্থায়ী ও কেন্দ্রীয় মুসলিম শাসনের ভিত্তি রাখেন মুহাম্মাদ ঘুরী।
❓ দিল্লি সালতানাত কবে শুরু হয়?
✅ উত্তর: ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে কুতুব উদ্দীন আইবেক দিল্লি সালতানাতের সূচনা করেন, যা ১৫২৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
❓ মুঘল শাসনের সূচনা কিভাবে হয়?
✅ উত্তর: ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
❓ মুসলিম শাসন ভারতে কত বছর ছিল?
✅ উত্তর: মুসলিম শাসন ভারতে প্রায় ৬৫০ বছর স্থায়ী ছিল—৭১২ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত।
❓ মুঘল শাসনের শেষ সম্রাট কে ছিলেন?
✅ উত্তর: দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট, যিনি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হন এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়।
❓ মুসলিম শাসকরা ভারতের জন্য কী অবদান রেখেছেন?
✅ উত্তর: মুসলিম শাসকরা ভারতে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, রাজস্বনীতি, সুবিচার, জ্ঞানচর্চা, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং অসাধারণ স্থাপত্য (যেমন: কুতুব মিনার, তাজমহল) উপহার দেন।
❓ দিল্লি সালতানাতের শাসকগণ কারা ছিলেন?
✅ উত্তর: দিল্লি সালতানাতে দাস বংশ, খিলজি, তুঘলক, সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসকগণ ছিল, যাদের মধ্যে ইলতুৎমিশ, আলাউদ্দিন খিলজি, এবং গিয়াস উদ্দিন তুঘলক অন্যতম।
❓ মুসলিম শাসনের পতন কেন হয়?
✅ উত্তর: দুর্বল শাসন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রমবর্ধমান প্রভাব মুসলিম শাসনের পতনের কারণ।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.