
জুমার খুতবা আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদসহ
"খুতবা" শব্দটি আরবি "خُطْبَةٌ" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো উপদেশ বা ভাষণ। ইসলামে জুমার দিন খুতবা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা সালাতের পূর্বে প্রদান করা হয়। এটি শুধু উপদেশ নয়, বরং তা জুমার নামাজের এক অপরিহার্য অংশ।
জুমার খুতবা ইসলামী সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও শিক্ষা প্রদান পদ্ধতি। জুমার নামাজ শুরু হওয়ার পূর্বে দুইটি খুতবা দেওয়া হয়। এই পোস্টে থাকছে প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবা পূর্ণ আরবি পাঠ, বাংলা উচ্চারণ ও সহজ বাংলায় অনুবাদ।
জুমার খুতবার গুরুত্ব
- খুতবা জুমার নামাজের একটি ফরজ শর্ত।
- এটি দ্বীনি উপদেশ ও আল্লাহর স্মরণের একটি মহান মাধ্যম।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম খুতবাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ
“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও...”
📚 (সূরা জুমু'আ: আয়াত ৯)
🔸 এই আয়াতে “আল্লাহর স্মরণ” বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে খুতবাই বোঝানো হয়েছে।
জুমার খুতবার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
বিষয় | ব্যাখ্যা |
---|---|
📚 দ্বীনি শিক্ষা | মুসলিমদের ঈমান, আমল, আখলাক ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। |
📢 উপদেশ | খুতবার মাধ্যমে নসীহত দেওয়া হয়, যা মানুষকে গুনাহ থেকে ফেরায়। |
🕋 ইবাদতের অংশ | জুমার খুতবা নামাজের মতোই ফরজ। নামাজ না হলেও খুতবা না থাকলে জুমা হবে না। |
⚠️ অমনোযোগী হলে | খুতবার সময় কথা বলা হারাম। এমনকি কারো দিকে ইশারাও জায়েয নয়। |
🕌 খুতবার ভাষা | খুতবার মূল অংশ আরবিতে হলেও, উপদেশ বাংলায় দেওয়া যায়। |
খুতবার সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও করণীয়
দুই অংশে বিভক্ত: প্রথম খুতবা ও দ্বিতীয় খুতবা।
আরবি দোয়া: খুতবার শেষে রাসুল (সা.) এর দোয়া পাঠ করা হয়।
ইমাম দাঁড়িয়ে বলেন: দুই খুতবা ইমাম দাঁড়িয়ে প্রদান করেন, মাঝখানে বসেন।
নামাজ পূর্বে: খুতবার পরে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
আরো পড়ুনঃ
সকাল ও সন্ধ্যার ২০টি জরুরি দোয়া (আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও হাদিসসহ)
প্রথম খুতবা (আরবি ও বাংলা উচ্চারণ)
আরবি পাঠ:
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ، نَحْمَدُهُ، وَنَسْتَعِينُهُ، وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا. مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ. وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
বাংলা উচ্চারণ:
ইন্নাল হামদা লিল্লাহি, নাহমাদুহূ, ওয়া নাস্তা’ঈনুহূ, ওয়া নাস্তাগফিরুহূ,
ওয়া না’উযু বিল্লাহি মিন শুরূরি আনফুসিনা, ওয়া মিন সাইইআতি আ’মালিনা।
মান ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু, ওয়া মান ইউদ্লিল ফালা হাদিয়া লাহু।
ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু।
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
বাংলা অনুবাদ:
নিশ্চয় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁরই সাহায্য চাই, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং নিজেদের মন্দ প্রবৃত্তি ও খারাপ আমল থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।
যাকে আল্লাহ হিদায়াত দেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না; আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ (উপাস্য) নেই — তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই।
এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
দ্বিতীয় খুতবা (আরবি ও বাংলা উচ্চারণ)
আরবি পাঠ:
أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ﷺ، وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ. أُوصِيكُمْ وَنَفْسِيَ الْمُقَصِّرَةَ بِتَقْوَى اللَّهِ. فَقَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: **يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا.** (سورة الأحزاب: 70)
বাংলা উচ্চারণ:
**আম্মা বা’দু:
ফা-ইন্না আসদাকাল হাদীসি কিতাবুল্লাহি,
ওয়া খাইরাল হাদই হাদই মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
ওয়া শাররাল উমূরি মুহদাসাতুহা,
ওয়া কুল্লা মুহদাসাতিন বিদ’আহ,
ওয়া কুল্লা বিদ’আতিন দোলালাহ।
উওসীকম ওয়া নাফসিয়াল মুকাসসিরাতা বিটাকওয়াল্লাহ।
ফাক্বাদ ক্বালাল্লাহু তাআলা:
ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা,
ওয়া কূলূ কাওলান সাদীদা।**
📚 (সূরা আহযাব: আয়াত ৭০)
আরো পড়ুন
নফল রোজার নিয়ত ও ফজিলত
বাংলা অনুবাদ:
অতঃপর —
নিশ্চয়ই সবচেয়ে সত্য কথা হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন),
আর সর্বোত্তম পথনির্দেশনা হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পথনির্দেশ।
আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হলো নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ (দ্বীনের নামে)।
প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবন হলো বিদআত,
আর প্রত্যেক বিদআত হলো গোমরাহী (ভ্রষ্টতা)।
আমি নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে আল্লাহভীতির (তাকওয়া) প্রতি উপদেশ দিচ্ছি।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।”
📚 (সূরা আহযাব: আয়াত ৭০)
এই খুতবায় মুসলিমদের সতর্ক করা হয় যেন তারা কুরআন-হাদীস অনুসরণ করে, দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন না করে, এবং সর্বদা আল্লাহভীতি ও সত্য কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলে।
জুমার খুতবা ইসলামের এক মহান বিধান, যা মুসলিম উম্মাহকে সপ্তাহে একবার কেন্দ্রীয়ভাবে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে। আমাদের উচিত মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা, বাস্তব জীবনে তা বাস্তবায়ন করা, এবং খুতবার সময় পূর্ণ তাজিম ও শ্রদ্ধা রক্ষা করা।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.