
অনলাইনে জিডি করার নিয়ম ২০২৫ – সহজ গাইড
জিডি হচ্ছে পুলিশের কাছে একটি সাধারণ অভিযোগ বা তথ্য রেকর্ড করার আনুষ্ঠানিক উপায়। পূর্বে থানায় গিয়ে সরাসরি করতে হতো, এখন বাংলাদেশ পুলিশ চালু করেছে অনলাইন জিডি সেবা — যার মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনি নির্দিষ্ট থানায় অভিযোগ করতে পারবেন।
প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের জীবনধারাও দিন দিন ডিজিটাল হয়ে উঠছে। আগের দিনে যে কোনো অভিযোগ বা হারানো জিনিসের জিডি (General Diary) করতে হলে সরাসরি থানায় যেতে হতো—যা সময়সাপেক্ষ এবং অনেকের জন্য কষ্টকর ছিল। কিন্তু এখন, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে চালু করেছে অনলাইনে জিডি করার ব্যবস্থা।
এই সেবার মাধ্যমে আপনি বাসায় বসেই নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে সহজেই হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল ফোন, পাসপোর্ট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের কাছে রেকর্ড করতে পারবেন। এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমনি হয়রানিও কমে।
এই পোস্টে আমরা জানব—অনলাইনে জিডি করার বিস্তারিত নিয়ম, কোন কোন অভিযোগ আপনি দিতে পারবেন, কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো। ২০২৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই গাইডটি তৈরি করা হয়েছে যেন আপনি ঝামেলাহীনভাবে অনলাইন জিডি করতে পারেন।
কোথায় থেকে অনলাইনে জিডি করা যায়?
📍 ওয়েবসাইট: gd.police.gov.bd
📱 মোবাইল অ্যাপ: “Online GD” (Android)
২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত, অনলাইন জিডি সেবা সিলেট রেঞ্জ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও মেট্রো এলাকায় চালু হয়েছে এবং ধাপে ধাপে দেশের সব থানায় বিস্তার লাভ করছে।
কীভাবে অনলাইনে জিডি করবেন?
ধাপ ১: রেজিস্ট্রেশন করুন
gd.police.gov.bd ওয়েবসাইটে যান অথবা “Online GD” অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
আপনার NID / পাসপোর্ট / জন্ম সনদ নম্বর, মোবাইল নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
একটি OTP কোড আপনার মোবাইলে যাবে, সেটি দিয়ে ভেরিফাই করুন।
ধাপ ২: লগইন করে নতুন জিডি শুরু করুন
এখন ড্যাশবোর্ডে গিয়ে “নতুন জিডি” বাটনে ক্লিক করুন।
অভিযোগের ধরন নির্বাচন করুন (যেমন: হারানো, ছিনতাই, ইভটিজিং ইত্যাদি)।
ঘটনার স্থান, তারিখ, সময় ও বিস্তারিত লিখুন।
ধাপ ৩: ডকুমেন্ট যুক্ত করুন ও সাবমিট করুন
প্রয়োজনীয় ফাইল (যেমন NID কপি, প্রমাণ) সংযুক্ত করুন।
“Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার মোবাইলে বা ইমেইলে একটি GD নম্বর ও QR Code সহ রিসিপ্ট চলে আসবে।
কোন ধরনের অভিযোগ অনলাইনে করা যায়?
- জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, পাসপোর্ট হারানো
- মোবাইল ফোন, ব্যাগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি হারানো
- ছিনতাই বা চুরির অভিযোগ
- ইভটিজিং, হুমকি
- প্রবাসী/পরিবারের নিখোঁজ সদস্য
- নৈশপ্রহরীর অনুপস্থিতি
⛔ জরুরি বা অস্ত্র সংক্রান্ত ঘটনার জন্য সরাসরি থানায় যান।
১. বর্তমানে কোথায় চালু?
Sylhet রেঞ্জে থেকে ১ জুন ২০২৫ থেকে সব থানা মেট্ট্রোসহ অনলাইন জিডি চালু হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ওCMP-তে দ্রুতই অথবা ইতোমধ্যেও চালু হয়েছে — ধাপে ধাপে সর্বত্র প্রসারিত হচ্ছে ।
২. অনলাইনে জিডি কীভাবে করবেন?
A. রেজিস্টার ও লগইন:
gd.police.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে বা “Online GD” মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করুন ।
- NID/জন্ম সনদ/পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, লাইভ ছবি ও OTP ভেরিফিকেশন পূরণ করুন।
B. জিডি ফাইলিং:
লগইন করে নতুন জিডি শুরু করুন—অপেক্ষিত তথ্য, সময়, স্থান ও অভিযোগের ধরন (যেমন: হারানো, ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিং, প্রবাসীদের অবস্থা ইত্যাদি) নির্বাচন করুন ।
- প্রয়োজনীয় ফাইল/দলিল সংযুক্ত করুন।
C. পরবর্তী পর্যবেক্ষণ:
অনলাইনে DIGITALLY রেকর্ড ও QR কপিপ্রাপ্ত হবে—আপনি PDF হিসেবে ডাউনলোড করতে পারবেন।
থানা থেকে তদন্তের আপডেট ও যোগাযোগের সুযোগও থাকবে ।
৩. কোন ধরনের জিডি এখন অনলাইনে করতে পারবেন?
বিস্তৃত ধরনের অভিযোগ: হারানো/ছিনতাই/চুরি/ইভটিজিং/প্রবাসীদের সমস্যা/নৈশ প্রহরী পালানোর ঘটনা ইত্যাদি ।
জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হলে অবশ্যই সরাসরি থানায় যোগাযোগ করতে হবে; কারণ অনলাইন জিডি মাত্র অভিযোগ রেকর্ডের জন্য, তাৎক্ষণিক অস্ত্র বা বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় নয় ।
৪. সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
সুবিধা:
- থানায় না গিয়ে ওই ঠিকানায় অভিযোগ রেজিস্টার করা যায়
- নতুন করে সার্টিফিকেট বা ডকুমেন্ট হারালে সময় ও ঝামেলা বাঁচে
- ডিজিটাল কপি ও QR সুবিধা — প্রয়োজনে সহজ ট্র্যাকিং
সীমাবদ্ধতা:
- পুরো দেশেই এখনো রোলআউট হচ্ছে—সব রেঞ্জে এখনও অনলাইনে চালু হয়নি
- “তাত্ক্ষণিক” পুলিশ অ্যাকশন বা অস্ত্র-ভিত্তিক জরুরি অবস্থায় কার্যকর নয়
- এখনও পুরো বাংলাদেশে চালু হয়নি (ধাপে ধাপে বিস্তার হচ্ছে)
- কিছু অভিযোগ অনলাইনে গ্রহণযোগ্য নয় (যেমন: মারামারি, খুন)
৫. ভবিষ্যতে প্রসার:
দেশের সকল রেঞ্জ ও মেট্রোর থানায় পর্যায়ক্রমে চালু হচ্ছে—Sylhet, Chattogram ছাড়াও দ্রুত ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় দ্রুত বিস্তার হবে ।
সারসংক্ষেপ
এখন Sylhet ও Chattogram রেঞ্জে অনলাইনে জিডি চালু।
ব্যবহার করতে gd.police.gov.bd বা Online GD অ্যাপ রেজিস্টার ও লগইন করতে হবে।
“হারানো, চুরি, ইভটিজিং, প্রবাসীদের সমস্যা” পরিসরের অভিযোগ অনলাইনে সম্ভব।
রেফারেন্স নম্বর ও QR কপির মাধ্যমে ট্র্যাক করা যাবে।
জরুরি ও অস্ত্র বিষয়ক সমস্যায় অবশ্যই সরাসরি থানায় যাচাই করতে হবে।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
Q1: অনলাইন জিডি করতে টাকা লাগে?
উ: না, এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা।
Q2: জিডি কিভাবে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করব?
উ: আপনার পাওয়া QR কপি বা PDF রিসিপ্টটি আপনি অফিস, আদালত, ব্যাংক বা যেকোনো দপ্তরে ব্যবহার করতে পারবেন।
Q3: আমি গ্রামের থানার জন্য জিডি করতে পারব?
উ: যদি আপনার থানা অনলাইন জিডি সিস্টেমে যুক্ত হয়, তাহলে পারবেন। সিলেট ও চট্টগ্রামে ২০২৫-এ চালু হয়েছে, অন্যান্য এলাকায় দ্রুত চালু হবে।
মন্তব্য করুন
Your email address will not be published.